ক্রীড়া প্রতিবেদক
বোলারদের হাত ধরে প্রথমবারের মত আইসিসি বিশ্বকাপে কোন ফর্মেটের ফাইনালে উঠেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ মিলিয়ে মোট সাতবার সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিয়ে ‘চোকার্স’ খ্যাতি পেয়েছিলো প্রোটিয়ারা। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ মিলিয়ে এই প্রথম বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলার টিকিট পেল তারা।
তবে ১৯৯৮ সালের পর আইসিসির কোন ইভেন্টে এই প্রথম ফাইনালে উঠলো দক্ষিণ আফ্রিকা। ঐ বছর আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে উঠে শিরোপা জিতেছিলো প্রোটিয়ারা। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ঐ ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৪ উইকেটে হারিয়েছিলো দক্ষিণ আফ্রিকা।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের নবম আসরের প্রথম সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকা ৯ উইকেটে হারিয়েছে আফগানিস্তানকে। প্রথমবারের মত আইসিসি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠলেও স্বপ্নের ফাইনালে খেলা হলো না আফগানদের। গ্রুপ পর্ব, সুপার এইট ও সেমিফাইনাল মিলিয়ে টানা অষ্টম জয় দক্ষিণ আফ্রিকার। ফলে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইতিহাসে টানা ৮ জয়ে অস্ট্রেলিয়ার রেকর্ড স্পর্শ করলো প্রোটিয়ারা। ৮ জয়ের নজির আছে অসিদেরও।
ত্রিনিদাদের ব্রায়ান লারা স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ওভারেই চলতি বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ২৮১ রানের মালিক ওপেনার রহমানুল্লাহ গুরবাজকে হারায় আফগানিস্তান। দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার মার্কো জানসেনের শিকার হয়ে খালি হাতে ফিরেন গুরবাজ। এরপর ২টি চারে ৯ রান করা নাইবকে বোল্ড করেন জানসেন। তৃতীয় ওভারে জোড়া আঘাতে আফগানিস্তানকে চাপে ফেল দেন দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার কাগিসো রাবাদা। ইব্রাহিমকে ২ ও মোহাম্মদ নবিকে শূণ্য হাতে বিদায় দেন রাবাদা।
পরের ওভারে আবারও দক্ষিণ আফ্রিকাকে উইকেট শিকারে মাতান জানসেন। নাঙ্গিয়াল খারোতিকে ২ রানে আউট করেন জানসেন। রাবাদা ও জানসেনের সাথে উইকেট শিকারে নাম লেখান এনরিট নর্টি। সপ্তম ওভারে প্রথম আক্রমনে এসে আজমতুল্লাহ ওমরজাইকে ১০ রানে শিকার করেন নর্টি। এতে ২৮ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে খাদের কিনারায় পড়ে যায় আফগানরা।
জানাতকে ৮ রানে লেগ বিফোর আউট করে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন স্পিনার তাবরাইজ শামসি। পঞ্চম বলে নূর আহমেদকে খালি হাতে বিদায় দেন শামসি। পরের ওভারে রশিদকে ৮ রানে শিকার করেন নর্টি। ৬ বলের ব্যবধানে শূণ্য রানে ৩ উইকেট হারিয়ে অলআউটের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায় আফগানিস্তান। শেষ পর্যন্ত ১১ দশমিক ৫ ওভারে ৫৬ রানে গুটিয়ে যায় আফগানিস্তান। টি-টোয়েন্টিতে এটিই সর্বনিম্ন দলীয় রান আফগানদের। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইতিহাসে সেমিফাইনালে সর্বনিম্ন রানে গুটিয়ে যাবার লজ্জার রেকর্ড গড়লো আফগানিস্তান।
৫৭ রানের সহজ টার্গেটে খেলতে নেমে দ্বিতীয় ওভারে ধাক্কা খায় দক্ষিণ আফ্রিকা। টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী আফগানিস্তানের বাঁ-হাতি পেসার ফারুকির বলে বোল্ড হন ৫ রান করা ওপেনার কুইন্টন ডি কক। এই উইকেট নিয়ে বিশ্বকাপের এক আসরে সর্বোচ্চ ১৭ শিকারের রেকর্ড গড়েছেন ফারুকি। এর আগে ২০২১ সালের আসরে ১৬ উইকেট নিয়েছিলেন শ্রীলংকার হাসারাঙ্গা ডি সিলভা।
দ্বিতীয় উইকেটে ৪৩ বলে ৫৫ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে ৬৭ বল বাকী রেখে দক্ষিণ আফ্রিকার ফাইনাল নিশ্চিত করেন আরেক ওপেনার রেজা হেনড্রিক্স ও মার্করাম। বল বিবেচনায় টি-টোয়েন্টিতে এটিই সবচেয়ে বড় জয় দক্ষিণ আফ্রিকার। ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় ২৫ বলে হেনড্রিক্স অপরাজিত ২৯ এবং ৪টি বাউন্ডারিতে ২১ বলে অনবদ্য ২৩ রান করেন মার্করাম। দারুন বোলিংয়ে ম্যাচ সেরা হয়েছেন জানসেন। আগামী ২৯ জুন ব্রিজটাউনে বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলতে নামবে দক্ষিণ আফ্রিকা। আজ দ্বিতীয় সেমিফাইনালে মুখোমুখি হবে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড ও ভারত। এ ম্যাচের বিজয়ী দল ফাইনালে প্রোটিয়াদের সঙ্গী হবে।