পাকিস্তানের কাছে ৭ উইকেটে হেরে পরাজয়ের বৃত্তেই বাংলাদেশ

ক্রীড়া প্রতিবেদক

সবার নিচে থেকে কে বিশ্বকাপ শেষ করতে পারে এই প্রতিযোগিতায় নেমেছে বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ড। দু’দলের নবম ও দশম স্থানের খেলটা বেশ জমে উঠেছে। যদিও আজ ম্যাচ হারলেও নবম স্থানেই আছে বাংলাদেশ। আর টেবিলের তলানিতে ইংল্যান্ড। আর বাংলাদেশকে ৭ উইকেটে হারিয়ে সপ্তম স্থান থেকে পঞ্চম স্থানে উঠে এসেছে পাকিস্তান। আজকের জয়ে সেমিফাইনালে খেলার আশা বাঁচিয়ে রেখেছে বাবর আজমের দল। কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে প্রথমে ব্যাট করে ৪৫ ওভার ১ বলে ২০৪ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। সহজ টার্গেটে ১০৫ বল হাতে রেখেই পৌছে যায় পাকিস্তান।

পরাজয়ের বৃত্তে আটকে থাকা বাংলাদেশের সব কিছুই এখন এলোমেলো। ব্যাটিং অর্ডারে যাকে যখন খুশি ইচ্ছে মতো নামিয়ে দেয়া হচ্ছে। বিশ্বকাপ তো নয় যেন পাড়া মহল্লার ক্রিকেট খেলছে বাংলাদেশ দল। কোন হোম ওয়ার্ক ছাড়াই বিশ্বকাপের মতো মেগা আসরে খেলতে এসেছে টাইগাররা। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ব্যাটিং পজিশন দেখলেই বাংলাদেশ দলের অস্থিরতা বোঝা যায়। ছয় ম্যাচে পাঁচবার ব্যাটিং পজিশন বদলেছে মাহমুদুল্লাহর। আজ খেলেছেন পাঁচ নাম্বারে। বাংলাদেশের হয়ে বিশ্বকাপে যেন একাই খেলতে এসেছেন। আজও দলের সর্বোচ্চ রান তার। একমাত্র হাফ সেঞ্চুরিটি করেছেন তিনি।

বাকি ব্যাটারদের ম্যাচের প্রথমে ব্যাটিং বা পরে ব্যাটিং সব জায়গাই একই চিত্র। যথারীতি ব্যর্থ ওপেনিং ব্যাটার তানজিদ হাসান। বাংলাদেশকে শূন্য রানে রেখে প্রথম ওভারেই সাজঘরে ফিরেছেন তিনি। শাহিন শাহ আফ্রিদির বলে এলবি’র শিকার হয়েছেন। বিশ্বকাপের আগে নাজমুল হোসন শান্তর ব্যাটে ছিল রানের ফোয়ারা। বিশ্বকাপে এসে শান্তর অশান্ত ব্যাট একেবারে শান্ত। ৪ রান করে দলীয় ৬ রানে দ্বিতীয় ব্যাটার হিসেবে আউট হয়েছেন তিনি।

মুশফিকুর রহিমও দুই অঙ্কের ঘর ছুঁতে পারেন নি। ৫ রান করে মুশফিক যখন মাঠ ছাড়ছেন বাংলাদেশের সংগ্রহ তখন ৩ উইকেটে ২৩ রান। অন্যরা ব্যর্থ হবেন জেনে দলের এই বিপর্যয়ে পাঠানো হয় মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে। দলের সব দায়িত্ব যেন রিয়াদের একারই। চতুর্থ উইকেট জুটিতে লিটন দাসকে সঙ্গে নিয়ে ৭৯ রান যোগ করেন তিনি। এই পার্টনারশিপ না হলে বাংলাদেশ দল দু’শো রানের আগে কোথায় গিয়ে থামতো সেটাই ছিল দেখার। ওপেনিংয়ে নামা লিটন ৪৫ রানে আউট হলে ভাঙে এই জুটি।

আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে এই বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত কোন শত রানের জুটি গড়তে পারেনি বাংলাদেশ দল। এরপর রানের গতি কমতে থাকে বাংলাদেশের। রিয়াদ-সাকিব জুটি ৫৯ বলে ২৮ রান করেন। ক্যারিয়ারের ২৮ তম ওয়ানডে হাফ সেঞ্চুরি করে ৭০ বল খেলে ৫৬ রানে আউট হয়েছেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। বিশ্বকাপে যেন খেলতে না দেখতে এসেছেন তৌহিদ হৃদয়। ব্যর্থতার মালা গেথে যাচ্ছেন একের পর এক। সাত রান করে দলকে বিপদে রেখে যান তিনি। সপ্তম ব্যাটার হিসেবে অধিনায়ক সাকিব আল হাসান আউট হয়েছেন দলীয় ১৮৫ রানে।

বাংলাদেশের শুরুর ব্যাটিংয়ের সাথে শেষের যেন অনেক মিল। বাংলাদেশ শেষ ৩ উইকেট হারিয়েছে চার রানে। মেহেদী মিরাজের ৩০ বলে ২৫ রানে দু’শো স্পর্শ করে বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত ৪৫ ওভার ১ বলে ২০৪ রানে অলআউট হয় টাইগাররা। পাকিস্তানের শাহীন শাহ আফ্রিদি ও মোহাম্মদ ওয়াসিম নিয়েছেন ৩টি করে উইকেট। ২ উইকেট নিয়েছেন হারিস রউফ।

২০৫ রানের টার্গেটে পাকিস্তানের ওপেনিং জুটি ছিল দুর্দান্ত। ১২৮ রান করেন আব্দুল্লাহ শফিক ও ফখর জামান। হাফ সেঞ্চুরি করেছেন দু’জনই। ৬৯ বলে ৬৮ রান করেন শফিক। মেহেদী হাসান মিরাজের বলে এলবি’র শিকার হয়েছেন তিনি। মেহেদী মিরাজ পাকিস্তানের অধিনায়ক বাবর আজমকে উইকেটে সেট হতে দেন নি। ৯ রান করার পর রিয়াদের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন বাবর।

ফখর জামান যখন সেঞ্চুরির পথে হাটছিলেন তাকেও থামিয়ে দেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ৮১ রান করার পর মেহেদীল বলে তৌহিদ হৃদয়ের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। অর্থাৎ পাকিস্তানের ৩ উইকেটের সবক’টিই নিয়েছেন মিরাজ। এরপর মোহাম্মদ রিজওয়ান ও ইফতিখার আহমেদ হেসে খেলে পাকিস্তানকে পৌছে দিয়েছেন জয়ের বন্দরে। ৩২ ওভার ৩ বল খেলেই জয় তুলে নেয় পাকিস্তান। রিজওয়ান ২৬ ও ইফতিখার ১৭ রানে অপরাজিত থাকেন।

Related articles

Comments

Share article

Latest articles

Newsletter

Subscribe to stay updated.