মাহমুদুল্লাহর সেঞ্চুরির পরও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বড় পরাজয় বাংলাদেশের

মোঃ শফিকুল আলম

যে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে বাতিলের খাতায় ফেলে দেয়া হয়েছিল তিনিই আজ ব্যাটে তার জবাব দিয়েছেন। যদিও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বড় পরাজয়ের লজ্জা থেকে দলকে বাঁচাতে পারেন নি। বাংলাদেশকে ১৪৯ রানে হারিয়ে বিশ্বকাপে পয়েন্ট টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। আর এই বড় পরাজয়ে পয়েন্ট টেবিলের একদম তলানিতে নেমে গেছে বাংলাদেশ। প্রথমে ব্যাট করে কুইন্টন ডি ককের সেঞ্চুরি ও হেনরিক ক্লাসেনের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ৫ উইকেটে ৩৮২ রান করে দক্ষিণ আফ্রিকা। জবাবে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ১১১ রান সত্ত্বেও ৪৬ ওভার ৪ বলে ২৩৩ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ।

প্রথমে ব্যাট করে দক্ষিণ আফ্রিকা যে কতোটা বিধ্বংসী রূপে হাজির হয় তার নমুনা তারা দেখালো বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচেও। অথচ মুম্বাইয়ে টস জিতে ব্যাটিং নিয়ে ৩৬ রানের মধ্যেই ২ উইকেট হারায় তারা।  দলীয় ৩৩ রানে রিজা হেন্ডরিক্স ও ৩৬ রানে ফন ডার ডুসেন আউট হয়েছেন। তবে অধিনায়ক এইডেন মার্করামকে সঙ্গে নিয়ে এই চাপ তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছেন কুইন্টন ডি কক। তৃতীয় উইকেটে ১৩৭ বলে ১৩১ রান যোগ করেন তারা। মার্করাম ৬৯ বলে ৬০ রান করেন।

এরপর বাংলাদেশের বোলারদের নিয়ে ছেলে খেলায় মেতে উঠেন কুইন্টন ডি কক ও হেনরিক ক্লাসেন। চার ছক্কার বৃষ্টি ঝড়িয়েছেন এই দুই ব্যাটার। সেঞ্চুরি করেন ডি কক। এ নিয়ে এবারের বিশ্বকাপে পাঁচ ম্যাচে তিনটি সেঞ্চুরির দেখা পেলেন তিনি। এর আগে শ্রীলংকা ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন। আর দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ছাড়িয়ে গেলেন এবি ডি ভিলিয়ার্সকে। এক বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে সবচেয়ে বেশি দুটি সেঞ্চুরির রেকর্ড ছিল ডি ভিলিয়ার্সের। তিনটি সেঞ্চুরি করে আজ নতুন রেকর্ড গড়লেন ডি কক। ওয়ানডেতে এটি তার ২০তম শতক। যেভাবে ব্যাট করছিলেন তাতে মনে হচ্ছিল ডাবল সেঞ্চুরির দেখা পাবেন। শেষ পর্যন্ত ১৪০ বলে ১৭৪ রান করার পর হাসান মাহমুদের বলে নাসুম আহমেদের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন। এবারের বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস এটি। তার ইনিংস ছিল ১৫টি চার ও সাতটি ছয়ে সাজানো।  চতুর্থ উইকেট জুটিতে ক্লাসেনকে সঙ্গে নিয়ে ৮৭ বলে ১৪২ রান যোগ করেন ডি কক।

তার বিদায়ে রানের গতি মোটেই কমেনি। কারণ ব্যাট হাতে ঝড় তুলেন হেনরিক ক্লাসেন। সেঞ্চুরির আশা জাগিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত ৪৯ বলে ৯০ রানে আউট হয়েছেন। ৮টি ছয় ও ২টি চার ছিল তার ইনিংসে। শেষ দিকে ডেভিড মিলারের ১৫ বলে ৩৪ রানে ৫ উইকেটে ৩৮২ রানের পাহাড় গড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। এ নিয়ে টানা সাত ওয়ানডে ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে ৩০০ এর উপর রান করলো দক্ষিণ আফ্রিকা। হাসান মাহমুদ ২ উইকেট নিয়েছেন। ১টি করে উইকেট পেয়েছেন মিরাজ, শরিফুল ও সাকিব।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিশাল রানের চাপ নিতে পারেনি বাংলাদেশ। শুরুতেই বিপর্যয়ে পড়ে দল। ৩১ রানের মধ্যেই টপ অর্ডারের তিন ব্যাটারকে হারায় টাইগাররা। দলীয় ৩০ রানে আউট হয়েছেন তানজিদ হাসান। ১২ রানে আউট হয়েছেন এই ওপেনিং ব্যাটার।‌ পরের বলেই শান্তকে আউট করে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা তৈরি করেছিলেন জানসেন।‌ সাকিব আল হাসান জানসেনকে হতাশ করলেও পরের ওভারেই আউট হয়ে দলকে বিপদে রেখে যান বাংলাদেশের অধিনায়ক। ৪ বল খেলে ১ রান করে উইলিয়ামসের বলে আউট হয়েছেন তিনি।

বাংলাদেশ যে চাপে পড়েছিল তা থেকে আর বের হতে পারেনি। দলীয় ৪২ রানে মুশফিকুর রহিম ও ৫৮ রানে লিটন দাস আউট হয়েছেন। মুশফিক ৮ ও লিটন ২২ রান করেন। দলের এই বিপর্যয়ের মাঝে একাই লড়াই চালিয়ে গেছেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। অন্যরা ছিলেন আসা যাওয়ার মাঝে। ১১ রানে আউট হয়েছেন মিরাজ। নাসুমের ব্যাট থেকে আসে ১৯ রান। অষ্টম ব্যাটার হিসেবে আউট হয়েছেন হাসান মাহমুদ।১৫ রান করেছেন তিনি। দলের এই বিপর্যয়ের মাঝেই হাফ সেঞ্চুরি করেন রিয়াদ।

বাংলাদেশ বড় ব্যবধানে হারতে যাচ্ছে এটা নিশ্চিত ছিল। রিয়াদ সেঞ্চুরি করতে পারেন কিনা সেটাই ছিল দেখার। কারণ কেউ তাকে যোগ্য সঙ্গ দিতে পারছিলেন না। শেষ পর্যন্ত ঝড়ো গতিতে ব্যাট চালিয়ে শতকের দেখা পেয়েছেন রিয়াদ। তবে ১১১ বলে ১১১ রান করে আউট হয়েছেন তিনি। ১১টি চার ও ৪টি ছয়ে সাজানো ছিল তার ইনিংস।

Related articles

Comments

Share article

Latest articles

Newsletter

Subscribe to stay updated.