ক্রীড়া প্রতিবেদক
রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের প্রথম ইনিংসে পাকিস্তানের ২৭৪ রানের জবাবে ২৬ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে খাদের কিনারায় পড়ে গিয়েছিলো সফরকারী বাংলাদেশ। সপ্তম উইকেটে লিটন দাস ও মেহেদি হাসান মিরাজের ১৬৫ রানের জুটিতে ধ্বংসস্তুপ থেকে ঘুরে দাঁড়ায় টাইগাররা। লিটনের সেঞ্চুরি ও মিরাজের হাফ-সেঞ্চুরিতে ২৬২ রানে অলআউট হয়েছে বাংলাদেশ। মাত্র ১২ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে শেষ বিকেলে বাংলাদেশের পেসার হাসান মাহমুদের বোলিংয়ে বিপদে পড়েছে পাকিস্তান। তৃতীয় দিন শেষে ২ উইকেটে ৯ রান করেছে তারা। ৮ উইকেট হাতে নিয়ে ২১ রানে এগিয়ে পাকিস্তান।
বৃষ্টির কারণে প্রথম দিনের খেলা পরিত্যক্ত হবার দ্বিতীয় দিনই নিজেদের প্রথম ইনিংসে অলআউট হয়ে যায় পাকিস্তান। দিনের শেষভাগে ২ ওভার ব্যাট করে বিনা উইকেটে ১০ রান তুলেছিলো বাংলাদেশ। তৃতীয় দিন খেলতে নেমে পাকিস্তানের দুই পেসার মির হামজা ও খুররাম শাহজাদের তোপের মুখে পড়ে বাংলাদেশ। ১৪ রানে প্রথম উইকেট পতনের পর ২৬ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারায় তারা। দিনের তৃতীয় ওভারে জীবন পেলেও পাকিস্তানের পেসার খুররাম শাহজাদের করা চতুর্থ ওভারে স্কয়ার লেগে আবরার আহমেদকে ক্যাচ দিয়ে ১ রানে ফিরেন ওপেনার জাকির হাসান। ইনিংসের অষ্টম ওভারের প্রথম বলে শাহজাদের বলে বোল্ড হন ১০ রান করা আরেক ওপেনার সাদমান ইসলাম। একই ওভারের চতুর্থ বলে বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তকেও বোল্ড করেন শাহজাদ। বাউন্ডারি দিয়ে ইনিংস শুরু করে ৪ রানে থামেন শান্ত।
এক ওভারে দুই উইকেট হারানোর ধাক্কা কাটিয়ে উঠার আগেই নবম ওভারের প্রথম বলে মোমিনুল হককে হারায় বাংলাদেশ। ২০ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। সেই বিপদ আরও বেড়ে যায় পরপর দুই ওভারে আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান মুশফিকুর রহিম ও সাকিব আল হাসান সাজঘরে ফিরলে। ২৬ রানে ৬ উইকেট পতনে টেস্ট ক্রিকেটে নিজেদের সর্বনিম্ন ৪৩ রানের নিচে গুটিয়ে যাবার শঙ্কায় পড়ে বাংলাদেশ।
সপ্তম উইকেটে দলের হাল ধরে বাংলাদেশকে লজ্জার হাত থেকে বাঁচাতে ক্রিজ আঁকড়ে থাকেন লিটন ও মিরাজ। শতরানের জুটি গড়ার পর জোড়া হাফ-সেঞ্চুরি করেন লিটন ও মিরাজ। আট বা তার নিচে নেমে বাংলাদেশের পক্ষে টেস্টে সর্বোচ্চ ৭টি অর্ধশতকের মালিক হন মিরাজ।
হাফ-সেঞ্চুরির পর সেঞ্চুরির পথেই হাটছিলেন লিটন ও মিরাজ। কিন্তু ব্যক্তিগত ৭৮ রানে শাহজাদকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে থামেন মিরাজ। ১২৪ বল খেলে ১২টি চার ও ১টি ছক্কা মারেন তিনি। ধ্বংসস্তুপ থেকে দলকে টেনে লিটনের সাথে ১৬৫ রানের জুটি গড়েন মিরাজ। ৫০ রানের নিচে ৬ উইকেট পতনের পর টেস্ট ইতিহাসে প্রথম দেড়শ রানের জুটি গড়লেন তারা। ।
মিরাজ ফেরার পরপরই দলীয় ১৯৩ রানে অষ্টম ব্যাটার হিসেবে শাহজাদের বলে ১ রানে আউট হন তাসকিন আহমেদ। তখন ৮৩ রানে অপরাজিত থেকে সেঞ্চুরির স্বপ্ন লিটনের চোখে। নবম উইকেটে হাসান মাহমুদকে নিয়ে পাকিস্তান বোলারদের বিপক্ষে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন লিটন। ৬৫তম ওভারে স্পিনার আবরার আহমেদের বলে চার মেরে ৪৩ ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি তুলে নেন ১৭১ বল খেলা লিটন।
সেঞ্চুরির পর হাসানকে নিয়ে হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করে দলের রান আড়াইশ পার করেন লিটন। এতে পাকিস্তানের রানকে টপকে যাবার ভালো সুযোগ তৈরি হয় বাংলাদেশের সামনে। কিন্তু দলীয় ২৬২ রানে সালমান আঘার বলে ছক্কা মারতে গিয়ে লং অনে সাইম আইয়ুবকে ক্যাচ দিয়ে থামেন লিটন। ১৩টি চার ও ৪টি ছক্কায় ২২৮ বলে ১৩৮ রান করেন লিটন। হাসানের সাথে ৬৯ রান যোগ করেন তিনি। লিটন ফেরার ওভারেই বাংলাদেশের শেষ ব্যাটার নাহিদ রানাকে খালি হাতে বিদায় দিয়ে বাংলাদেশের ইনিংস ২৬২ রানে শেষ করেন সালমান। ১৩ রানে অপরাজিত থাকেন হাসান।