ক্রীড়া প্রতিবেদক
ডান-হাতি ব্যাটার লিটন দাসের দুর্দান্ত সেঞ্চুরির পরও সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টের তৃতীয় দিন নিউজিল্যান্ডের কাছে ইনিংস ও ১১৭ রানে হারলো সফরকারী বাংলাদেশ। লিটন ১০২ রান করেন।সিরিজের প্রথম ম্যাচে জয় পাওয়ায় দুই ম্যাচের সিরিজ ১-১ সমতায় শেষ করলো টাইগাররা। প্রথম ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে ৮ উইকেটে হারিয়েছিল বাংলাদেশ।
বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অন্তর্ভূক্ত এটিসহ ৪ ম্যাচে ১ জয় ও ৩ হারে ১২ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের ষষ্ঠ স্থানে থাকলো বাংলাদেশ। ৪ ম্যাচে ১ জয়, ২ হার ও ১ ড্রতে ১৬ পয়েন্ট পেলেও, জয়ের শতাংশের হিসেবে টেবিলের অষ্টমস্থানে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন নিউজিল্যান্ড।
ক্রাইস্টচার্চে প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেটে ৫২১ রান করে নিউজিল্যান্ড। এরপর নিজেদের প্রথম ইনিংসে দ্বিতীয় দিন ১২৬ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। ৩৯৫ রানে পিছিয়ে ফলো-অনে পড়ে আজ, তৃতীয় দিনের শুরুতে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে টাইগাররা। ইনিংসের শুরু থেকে ব্যাট হাতে দারুণ সতর্ক ছিলেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার সাদমান ইসলাম ও অভিষিক্ত মোহাম্মদ নাইম। নিউজিল্যান্ডের বোলারদের সামনে প্রতিরোধ গড়ে কোন বিপদ ছাড়াই ১৩ ওভার কাটিয়ে দেন তারা। স্কোর বোর্ডে রান উঠে ২৭। ১৪তম ওভারে বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটিতে ভাঙ্গন ধরান নিউজিল্যান্ডের পেসার কাইল জেমিসন।
জেমিসনের লেগ সাইডের বল ফ্লিক করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন সাদমান। ২১ রান করেন সাদমান। এরপর উইকেটে আসেন তিন নম্বরে নামা নাজমুল হোসেন শান্ত। ২৭তম ওভারে ওয়াগানারের বাউন্সারে পুল করে ফাইন লেগে বোল্টকে ক্যাচ দেন শান্ত। আউট হওয়ার আগে ৫টি ও ১টি ছক্কায় ৩৬ বলে ২৯ রান করেন তিনি। আরেক প্রান্তে ব্যাট হাতে টেস্ট মেজাজেই ছিলেন নাইম। এ ম্যাচে দেশের শততম টেস্ট খেলতে নেমে প্রথম ইনিংসে শুন্য রানে ফিরেছিলেন তিনি। তবে এবার ৯৮ বল খেলে ১ বাউন্ডারিতে ২৪ রান করে সাউদির বলে আউট হন নাইম।
এরপর ২৩ রানের ব্যবধানে প্যাভিলিয়নে ফিরেন অধিনায়ক মোমিনুল হক ও ইয়াসির আলি। ১২৮ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে, যখন দ্রুত গুটিয়ে যাবার পথে ছিঠকে পড়ে বাংলাদেশ, তখনই উইকেটরক্ষক নুরুল হাসানকে নিয়ে উইকেট বাঁচানোর লড়াই শুরু করেন লিটন। দিনের শেষ সেশন শুরু করে স্বাচ্ছেন্দ্যেই খেলতে থাকেন লিটন ও নুরুল। ৬১তম ওভারে বোল্টকে চারটি বাউন্ডারি মারেন লিটন। ঐ ওভারের প্রথম বাউন্ডারিতে হাফ-সেঞ্চুরিতে পা রাখেন লিটন। এজন্য বল খেলেছেন ৬৯টি।
৬৩তম ওভারে জুটিতে শতরান পূর্ণ হয় লিটন ও নুরুলের। কিন্তু পরের ওভারে নুরুলের উইকেট হারায় বাংলাদেশ। মিচেলের করা ৬৪তম ওভারের শেষ বলে নিজের ভুল শটে মিড-অফে ওয়াগনারের হাতে ক্যাচ দেন নুরুল। এতে ৩৬ রানের দারুন ইনিংসের শেষ হয়। লিটনের সাথে ১০৫ বলে ১০১ রান যোগ করেন নুরুল।
নুরুল ফিরে যাবার পর সতর্ক সাবধানী ব্যাটিং করেন লিটন। মেহেদি হাসান মিরাজের সাথে ১৫ রানের জুটি গড়েন লিটন। ৩০ বল খেলে ৩ রান করেন মিরাজ। মিরাজ যখন ফিরেন তখন ৮১ রানে দাঁড়িয়ে লিটন। তবে ৭৩তম ওভারে ওয়াগনারকে ২টি চার মেরে নব্বইয়ের ঘরে পার রাখেন লিটন। আর ৭৪তম ওভারে জেমিসনের প্রথম তিন বলে যথাক্রমে ২,২ ও ৪ রান নিয়ে ৯৮ রানে পৌঁছে যান লিটন। চতুর্থ ডেলিভারিতে ২ রান নিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন লিটন। ১০৫ বলে তিন অংকে পা রাখেন তিনি।
সেঞ্চুরি পাবার ১ ওভার পরই লিটনকে প্যাভিলিয়নের পথ দেখান জেমিসন। লেগ বিফোর হন তিনি। অষ্টম ব্যাটার হিসেবে ১০২ রান করে ফিরেন লিটন। লিটনের পর শরিফুল ইসলামকে খালি হাতে বিদায় দেন জেমিসন। ২৬৯ রানে বাংলাদেশের নবম উইকেটের পতন ঘটে।৮০তম ওভারে বিদায়ী টেস্ট খেলতে নামা টেইলরের হাতে বল তুলে দেন নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক টম লাথাম। ২০১৩ সালে সর্বশেষ বাংলাদেশের বিপক্ষেই টেস্টে বল করেছিলেন টেইলর। নিজের প্রথম ওভারের তৃতীয় বলেই বাংলাদেশের শেষ উইকেট তুলে নিউজিল্যান্ডের জয় নিশ্চিত করেন টেইলর। এবাদতকে আউট করেন তিনি। বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয় ২৭৮ রানে।