শফিকুল আলম শিপলু
আর মাত্র একটি ম্যাচ। আর মাত্র একটি জয়। প্রস্তুত শিরোপার মঞ্চ। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করে বিজয়ের মঞ্চে ট্রফি উঁচিয়ে ধরবে বলে পণ করেছে বাংলাদেশের মেয়েরা। যে কোন মূল্যে ভারতকে হারানো চাই। আর সেটা করতে পারলে সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে বিজয়ের আনন্দে মাতবে মারিয়া মান্ডারা। এ দেশের ফুটবল প্রেমীদের একটাই প্রত্যাশা শেষ হাসি হাসবে বাংলাদেশের মেয়েরাই।
আঁখি, সামসুন্নাহারদের আত্নবিশ্বাসের বড় জায়গা শুধু এই টুর্নামেন্টের পারফরম্যান্স নয়, ফিরে যেতে হচ্ছে চার বছর আগে। ২০১৭ সালে সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ হয়েছিল বাংলাদেশে। এই ডিসেম্বর মাসেই হয়েছিল টুর্নামেন্ট। সব ম্যাচই হয়েছে কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে। ফাইনালের আগে বাংলাদেশ ৩-০ গোলে হারিয়েছিল ভারতকে। ফাইনালে আবার দেখা হয়েছিল বাংলাদেশ ও ভারতের।
চার বছর পর ঠিক যেন একই অঙ্ক মিলে যাচ্ছে। এবার অনূর্ধ্ব-১৯ টুর্নামেন্টটা হচ্ছে কমলাপুর স্টেডিয়ামেই। ফাইনালের আগে বাংলাদেশ হারিয়েছে ভারতকে। আবার ফাইনালে উঠেছে চার বছর আগের দু’টো দলই। বাংলাদেশ ও ভারত। চার বছর আগের শেষের অঙ্ক মেলানোর অপেক্ষায় এখন বাংলাদেশের মেয়েরা। ২০১৭ সালে ভারতকে ১-০ গোলে হারিয়ে সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতেছিল বাংলাদেশ। ৪১ মিনিটে সামসুন্নাহার সিনিয়রের গোলে বিজয় নিশ্চিত হয়েছিল লাল সবুজদের। চার বছর পর সেই ভারতকে হারিয়ে আবার সেরকম বিজয়ের অপেক্ষায় বাংলাদেশের মেয়েরা। সেই টুর্নামেন্টে সেরা খেলোয়াড় হয়েছিলেন বাংলাদেশের আঁখি খাতুন।
এবারের আসরে বাংলাদেশের এখন পর্যন্ত যে পারফরম্যান্স তাতে ফাইনাল ম্যাচে এগিয়ে থেকেই শুরু করবে। অবাক করা পরিসংখ্যান বাংলাদেশ দলের। ফাইনাল পর্যন্ত আসতে চার ম্যাচে প্রতিপক্ষের জালে ১৯ গোল দিয়েছে স্বাগতিক দলের মেয়েরা। বিপরীতে একটি গোলও হজম করেনি।

মারিয়াদের এই টুর্নামেন্টে শুরুটা অবশ্য হয়েছিল কোন গোলের দেখা না পেয়েই। প্রথম ম্যাচে একাধিক সুযোগ তৈরী করেও ভাগ্য সহায় না হওয়ায় নেপালের সাথে গোলশুন্য ড্র। এরপর ভুটানের জালে ছয় গোল দিয়েছে বাংলাদেশ। পরের ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে ১-০ গোলের জয়। আর শেষ ম্যাচে শ্রীলংকাকে নিয়ে রীতিমতো ছেলে খেলা করেছে বাংলাদেশ দল। গুনে গুনে ১২ গোল দিয়েছে আফিদা, শাহিদারা। তাই ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে ফেভারিট হিসেবেই শুরু করবে বাংলাদেশ দল। ভারত শক্তিশালী হলেও এই ভারতকেই ১৭ ডিসেম্বর ১-০ গোলে হারিয়েছে বাংলাদেশ। তাই দারুণ আত্নবিশ্বাসী হয়েই মাঠে নামবে মারিয়া মান্ডারা।
বাংলাদেশ আরও এগিয়ে থাকবে কারণ বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টে মেয়েদের সাফল্য বাংলাদেশের হয়ে কথা বলছে। এবারই প্রথম হচ্ছে সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ। এর আগে যে সাফ অনূর্ধ্ব-১৮ চ্যাম্পিয়নশিপ হয়েছিল সেখানেও চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ দল। ভুটানে ২০১৮ সালে সেই আসরে নেপালকে ১-০ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ।
বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টে সাফল্যের বার্তা আগে থেকেই বয়ে চলেছে বাংলাদেশের মেয়েরা। এবারও এর ধারবাহিকতা থাকবে এটা মনে প্রাণে চায় সবাই। কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ও ভারতের ফাইনাল ম্যাচ শুরু হবে সন্ধ্যা ছয়টায়। শুধু টিভি পর্দায় খেলা দেখলে চলবে না। মাঠে এসে উৎসাহ দিতে হবে বাংলাদেশের মেয়েদের। আপনার উৎসাহ-ই পারবে মাঠে মেয়েদের আরও উজ্জীবিত করে তুলতে। বিজয়ের মাসে লাল-সবুজ পতাকাকে ২২ ডিসেম্বর আরও স্বগৌরবে উড়তে দেখতে চাই।