শান্তর দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে আয়ারল্যান্ডকে হারাল বাংলাদেশ

ক্রীড়া প্রতিবেদক

নাজমুল হোসেন শান্তর সেঞ্চুরিতে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে আয়ারল্যান্ডকে ৩ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। ১১৩ বলে ৭টি চার ও ১০টি ছক্কায় টেক্টরের ১৪০ রানে নির্ধারিত ৪৫ ওভারে ৬ উইকেটে ৩১৯ রানের বড় সংগ্রহ পায় আয়ারল্যান্ড। জবাবে নাজমুল হোসেন শান্তর ৯৩ বলে ১১৭ রানের দুর্দান্ত ইনিংসে ৩ বল বাকী থাকতে ৩২০ রানের টার্গেট স্পর্শ করে জয় পায়  বাংলাদেশ। ৩০০ বা তার বেশি রান তাড়া করে ষষ্ঠ জয়ের স্বাদ পেল বাংলাদেশ। রান তাড়া করে জয়ে এ ম্যাচ রয়েছে তৃতীয় স্থানে। তৌহিদ হৃদয় ৫৮ বলে ৬৮ ও শেষ দিকে মুশফিকুর রহিম ২৮ বলে অপরাজিত ৩৬ রান করে দলের জয়ে অবদান রাখেন।

ইংল্যান্ডের চেমসফোর্ডের কাউন্টি গ্রাউন্ডে বৃষ্টি বিঘ্নিত ম্যাচের দৈর্ঘ্য ৪৫ ওভারে নামিয়ে আনা হয়। টস জিতে প্রথমে বোলিং করার সিদ্বান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক তামিম ইকবাল। বল হাতে বাংলাদেশকে দারুণ সূচনা এনে দেন পেসার হাসান মাহমুদ।

প্রথম ওভারের পঞ্চম বলে ইনসুইংয়ে পল স্টার্লিংকে পরাস্ত করেন হাসান। স্টার্লিং রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেললে বাঁ-দিকে ঝাপিয়ে বল হাতে মুঠোয় নেন উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিম। আউটের আবেদন করে বাংলাদেশ। আম্পায়ার সাড়া না দিলে রিভিউ নেন তামিম। রিভিউতে আল্ট্রা-এজে দেখা যায় বল ব্যাট স্পর্শ করেছে। ২ বল খেলে শূন্যতে বিদায় নেন স্টার্লিং।

শুরুর সাফল্যে আত্মবিশ্বাসী হাসান নিজের চতুর্থ ওভারেও উইকেটের দেখা পান। পয়েন্টে মেহেদি হাসান মিরাজকে ক্যাচ দিয়ে ১২ রানে আউট হন আয়ারল্যান্ডের আরেক ওপেনার স্টিভেন ডোহেনি। ১৬ রানে ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে আয়ারল্যান্ড। এ অবস্থায় দলের হাল ধরেন অধিনায়ক অ্যান্ড্রু বলবির্নি ও হ্যারি টেক্টর। ২৪তম ওভারে বাংলাদেশকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন পেসার শরিফুল ইসলাম। উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে আউট হন ৫টি চারে ৪২ রান করা  বলবির্নি। তৃতীয় উইকেটে ১০৪ বলে ৯৮ রানের জুটি গড়েন বলবির্নি-টেক্টর।

বলবির্নির পর লরকান টাকারকে ১৬ রানে বিদায় করেন শরিফুল। ছয় নম্বরে নামা কার্টিস ক্যাম্ফারকে ৮ রানে থামান তাইজুল। ১৬৭ রানে পঞ্চম উইকেট পড়লেও আয়ারল্যান্ডের রানের চাকা ঘুড়িয়েছেন টেক্টর। ৯২ বল খেলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৩১তম ম্যাচে চতুর্থ সেঞ্চুরির দেখা পান টেক্টর। সেঞ্চুরি পর আরও মারমুখী হয়ে উঠেন তিনি। ডকরেলের সাথে ষষ্ঠ উইকেটে ৬৮ বলে ১১৫ রান যোগ করে  থামেন টেক্টর। ৪২তম ওভারে পেসার এবাদতের বলে বোল্ড হন টেক্টর। আউট হওয়ার আগে  ৭টি চার ও ১০টি ছক্কায় ১১৩ বলে ১৪০ রান করেন তিনি। এটি বাংলাদেশের বিপক্ষে আয়ারল্যান্ডের কোন ব্যাটারের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস। সেই সাথে আয়ারল্যান্ডের হয়ে এক ম্যাচে সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ডও গড়েন টেক্টর। আর ৪৫ ওভারে ৬ উইকেটে ৩১৯ রানের বিশাল সংগ্রহ পায় আইরিশরা।

ওয়ানডেতে চতুর্থ হাফ-সেঞ্চুরির ইনিংসে ৩টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৪৭ বলে অপরাজিত ৭৪ রান করেন ডকরেল। ২টি ছক্কায় ৮ বলে অপরাজিত ২০ রান করেন অ্যাডায়ার। বাংলাদেশের হাসান ৪৮ ও শরিফুল ৮৩ রানে ২টি করে উইকেট নেন। এবাদত ৫৬ ও তাইজুল ৫৯ রানে ১টি করে শিকার করেন।

৩২০ রানের বিশাল টার্গেটের জবাব দিতে নেমে চতুর্থ ওভারেই অধিনায়ক তামিমকে হারায় বাংলাদেশ। অধিনায়ককে হারানোর পর দেখেশুনে খেলতে থাকেন আরেক ওপেনার লিটন দাস ও তিন নম্বরে নামা নাজমুল হোসেন শান্ত। ৯ ওভার শেষে ৪০ রান তুলে বিচ্ছিন্ন হন তারা। পেসার হিউমের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ২১ বলে ২১ রান করা লিটন।

৪০ রানে ২ উইকেট পতনে আয়ারল্যান্ডের বোলারদের উপর পাল্টা আক্রমন করেন শান্ত। সাকিবকে নিয়ে দলের রান ১শ পার করেন তিনি। উইকেটে সেট হয়ে শান্তর সাথে ৪৭ বলে ৬১ রান যোগ করে আউট হন সাকিব। ৫টি চারে ২৭ বলে ২৬ রান করেন সাকিব। দলীয় ১০১ রানে সাকিবের বিদায়ে ক্রিজে শান্তর সঙ্গী হন হৃদয়। ৪৯ বলে হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করার পর নিজের ইনিংস বড় করেছেন শান্ত। হৃদয়ের ছক্কায় ৩১তম ওভারে বাংলাদেশের রান ২শ স্পর্শ করে। ঐ ওভারেই পঞ্চম ওয়ানডেতে ৪৯ বলে দ্বিতীয় হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান হৃদয়।

৩৪তম ওভারের প্রথম বলে ২৩ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পান   শান্ত। এজন্য ৮৩ বল খেলেছেন তিনি। শান্তর সেঞ্চুরি পাবার ওভারে আউট হন হৃদয়। ডকরেলের শিকার হবার আগে ৫টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৫৮ বলে ৬৮ রান করেন হৃদয়। শান্ত-হৃদয় জুটি  ১০২ বল খেলে ১৩১ রান যোগ করেন। ক্যাম্ফারের করা ৩৭তম ওভারে দলীয় ২৫৭ রানে বিদায় নেন শান্ত। ১২টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৯৩ বলে ১১৭ রানের নান্দনিক ইনিংস খেলেন শান্ত। এসময় জয়ের জন্য শেষ ৮ ওভারে ৬৩ রান দরকার পড়ে বাংলাদেশের।

ষষ্ঠ উইকেটে ১৭ বলে ২৯ রান তুলেন মুশফিকুর রহিম ও মিরাজ। ৩টি চারে ১২ বলে ১৯ রান করে আউট হন মিরাজ। শেষ ৩২ বলে ৩৪ রানের দরকারে সপ্তম উইকেটে ২২ বলে ২৩ রান যোগ করেন মুশফিক ও তাইজুল।  ৯ রান করে আউট হন তাইজুল। শেষ ১০ বলে ১১ রান দরকার পড়ে বাংলাদেশের।

শেষ ওভারের প্রথম দুই বলে রান পাননি মুশফিক। তৃতীয় ডেলিভারিটি নো-বল হয়। পরের ফ্রি-হিটের ডেলিভারিতে বাউন্ডারি মেরে বাংলাদেশকে অবিস্মরনীয় জয় এনে দেন মুশফিক। ৪টি চারে ২৮ বলে অপরাজিত ৩৬ রান করেন মুশফিক।  আয়ারল্যান্ডের ক্যাম্ফার-ডকরেল ২টি করে উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হন শান্ত। আগামীকাল একই ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে। তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। প্রথম ওয়ানডে বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়।

Related articles

Comments

Share article

Latest articles

Newsletter

Subscribe to stay updated.