মোঃ শফিকুল আলম
ব্যাটার ডেভিড মালানের অনবদ্য সেঞ্চুরিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে হারল স্বাগতিক বাংলাদেশ। আজ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের কাছে ৩ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ। এই হারে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে গেল টাইগাররা। টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে ১৬ বল বাকী থাকতেই ২০৯ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫৮ রান করেন ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত। জবাবে ১৬১ রান তুলতেই ৭ উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। অষ্টম উইকেটে আদিল রশিদকে নিয়ে ৫১ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে ইংল্যান্ডকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন মালান। ১৪৫ বলে ১১৪ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলেন মালান। ইংলিশদের পক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৬ রান করেন উইল জ্যাকস।
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করার সিদ্বান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক তামিম ইকবাল। ৪ ওভারের মধ্যে তামিমের ব্যাট থেকে ৩টি চার এলেও অন্যপ্রান্তে সাবধানী ছিলেন লিটন। ১০ম বলে এসে রানের খাতা খুলেন লিটন। পঞ্চম ওভারের চতুর্থ বলে পুল করে স্কয়ার লেগ দিয়ে ছক্কা মারেন লিটন। ওকসের করা পরের ডেলিভারিতেই লেগ বিফোর আউট হন লিটন। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি ১৫ বলে ৭ রান করেন লিটন। দলীয় ৩৩ রানে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
লিটনের বিদায়ে উইকেটে আসেন সর্বশেষ বিপিএলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক নাজমুল হোসেন শান্ত। প্রথম ১২ বলের মধ্যে ৩টি চার মারেন শান্ত। ১০ম ওভারে প্রথমবারের মত আক্রমনে এসেই তামিমকে বিদায় দেন ইংল্যান্ডের পেসার মার্ক উড। উডের ১৪৯ কিলোমিটার গতির বল তামিমের কনুইয়ে লেগে স্টাম্পে আঘাত হানে। ৪টি চারে ৩২ বলে ২৩ রান করে বিদায় নেন তামিম। ৫১ রানে তামিমকে হারানোর পর জুটি বাঁধেন শান্ত ও মুশফিকুর রহিম। ২০তম ওভারে আরেক স্পিনার আদিল রশিদের চতুর্থ বলে ছক্কা মারতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে উডকে ক্যাচ দেন ৩৪ বলে ১৬ রান করা মুশি।
মুশফিকের বিদায়ে পাঁচ নম্বরে নামা সাকিব আল হাসান সুবিধা করতে পারেননি। মঈনের বলে সুইপ করতে গিয়ে ব্যাট-বলে স্পর্শ করাতে না পারায় সরাসরি বোল্ড হন ১২ বলে ১টি চারে ৮ রান করা সাকিব। ১০৬ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। দলকে চাপমুক্ত করতে বড় জুটির চেষ্টা করেন শান্ত ও ছয় নম্বরে নামা মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ৩১তম ওভারের পঞ্চম বলে ১৬ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথম হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান শান্ত।
৩৫তম ওভারে বাংলাদেশের রান দেড়শ পার করে দলকে খেলায় ফেরান শান্ত ও মাহমুদুল্লাহ। পরের ওভারে রশিদের বলে লেগ সাইড দিয়ে মারতে গিয়ে শর্ট মিড উইকেটে জেসন রয়ের দারুন ক্যাচে বিদায় নেয়ার আগে ৬টি চারে ৮২ বল খেলে ৫৮ রান করেন শান্ত। শান্তকে অনুসরণ করে পরের ওভারেই বিদায় নেন মাহমুদুল্লাহ। ৪৮ বলে ৩১ রান করেন তিনি।
পরপর দুই ওভারে দুই সেট ব্যাটার শান্ত ও মাহমুদুল্লাহকে হারিয়ে আবারও চাপে পড়ে বাংলাদেশ। ১৬২ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারায় টাইগাররা। টেল-এন্ডারে বাংলাদেশের দুই ভরসা আফিফ হোসেন ও মেহেদি হাসান মিরাজও দ্রুত প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন। আফিফকে ৯ রানে বিদায় দেন অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা অকেশনাল স্পিনার উইল জ্যাকস। মিরাজকে ৭ রানে থামান আর্চার। ১৮২ রানে অষ্টম উইকেটের পতন ঘটে বাংলাদেশের। এতে দু’শর নীচে গুটিয়ে যাবার শঙ্কায় পড়ে টাইগাররা। কিন্তু সেটি হতে দেননি তাসকিন আহমেদ ও তাইজুল ইসলাম। নবম উইকেটে ২৫ বলে ২৬ রানের জুটি গড়েন তারা। ২শ রান স্পর্শ করে বাংলাদেশ।
৪৭তম ওভারে তাসকিনকে ১৪ রানে থামিয়ে জুটি ভাঙ্গেন আর্চার। ১৮ বল খেলে ১টি করে চার-ছক্কা মারেন তাসকিন। পরের ওভারে মঈনের বলে শেষ ব্যাটার হিসেবে আউট হন ১৩ বলে ১০ রান করেন তাইজুল। ৪৭ দশমিক ২ ওভারে ২০৯ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ।
২১০ রানের টার্গেট দিয়ে শুরুতেই বল হাতে সাকিবকে আক্রমনে আনেন বাংলাদেশ অধিনায়ক তামিম। শেষ বলে রয়কে ফেরান সাকিব। নবম ওভারে দ্বিতীয়বারের মত আক্রমনে এসেই সল্ট ও মালান জুটি ভাঙ্গেন স্পিনার তাইজুল। ১২ রান করা সল্টকে বোল্ড করেন তাইজুল। নিজের চতুর্থ ওভারে দ্বিতীয় উইকেটের দেখা পান তাইজুল। উইকেট ছেড়ে খেলতে গিয়ে স্টাম্প আউট হন ৬ রান রান করা জেমস ভিন্স। এরপর তাসকিনের দারুন এক ডেলিভারিতে শান্তকে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন ইংল্যান্ডের দলনেতা বাটলার।
২৬তম ওভারে মালান-জ্যাকস জুটি বিচ্ছিন্ন করেন মিরাজ। ছক্কা মারতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে আফিফকে ক্যাচ দেন জ্যাকস। এ অবস্থায় ষষ্ঠ উইকেটে মঈনকে নিয়ে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন উইকেটে সেট ব্যাটার মালান। ৩২তম ওভারে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের চতুর্থ হাফ-সেঞ্চুরি তুলেন মালান। হাফ-সেঞ্চুরির পর চড়াও হন মালান। ৩৫তম ওভারের শেষ বলে মঈনকে আউট করেন মিরাজ। এরপর আট নম্বরে নামা ওকসকে ৭ রানে ফিরিয়ে ম্যাচে নিজের তৃতীয় উইকেট নেন তাইজুল। এতে ম্যাচ জয়ের পথে ভালোভাবেই টিকে থাকে বাংলাদেশ। শেষ ১০ ওভারে ৩ উইকেট হাতে নিয়ে ৪৪ রান দরকার পড়ে ইংল্যান্ডের। এ অবস্থায় ক্রিজে মালানের সঙ্গী হন রশিদ। ৪৬তম ওভারে তাসকিনের তৃতীয় বলে চার মেরে ১৬তম ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে চতুর্থ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন মালান। তিন অংকে পা রাখতে ১৩৪ বল খেলেন মালান।
৪৯তম ওভারের চতুর্থ বলে বাউন্ডারি মেরে ইংল্যান্ডের জয় নিশ্চিত করেন মালান। ৮টি চার ও ৪টি ছক্কায় ১৪৫ বলে অপরাজিত ১১৪ রান করে ম্যাচ সেরা হন মালান। ১টি চারে ২৯ বলে অপরাজিত ১৭ রান করেন রশিদ। অষ্টম উইকেটে ৫৯ বলে অবিচ্ছিন্ন ৫১ রান যোগ করেন মালান-রশিদ জুটি। বাংলাদেশের তাইজুল ৩টি, মিরাজ ২টি ও সাকিব-তাসকিন ১টি করে উইকেট নেন। একই ভেন্যুতে আগামী ৩ মার্চ সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হবে।