ক্রীড়া প্রতিবেদক
বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হতে আর মাত্র একটি জয় দূরে ভারত। তৃতীয়বার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হতে দুর্বার গতিতে ছুটতে থাকা ভারত পেয়ে গেছে ফাইনালের টিকিট। প্রথম সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়েছে ৭০ রানে। এর ফলে গত বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের কাছে হারের প্রতিশোধ নিল ভারত। বিরাট কোহলি ও শ্রেয়াস আয়ারের জোড়া সেঞ্চুরিকে প্রথমে ব্যাট করে ৪ উইকেটে ৩৯৭ রান করে ভারত। জবাবে ৩২৭ রানে অলআউট হয় নিউজিল্যান্ড। মোহাম্মদ শামি নেন ৭ উইকেট।
রেকর্ডের পর রেকর্ড ভারতের ব্যাটিংয়ে। তবে সবই যেন বিরাট কোহলিকে ঘিরে। ১৫ নভেম্বর বিরাট কোহলির জন্য বিশেষ এক দিন হয়েই থাকলো। নিজেকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেলেন বিরাট কোহলি। কিংবদন্তী শচীন টেন্ডুলকারকে আজ দুই জায়গায় ছাড়িয়ে গেছেন তিনি। কোহলির কল্যানে ওয়ানডে ক্রিকেট কোন ব্যাটারের সেঞ্চুরির হাফ সেঞ্চুরিও দেখলো। এই কৃতি নেই আর কারও। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করে ওয়ানডেতে তার সেঞ্চুরি এখন ৫০। ছাড়িয়ে গেছেন শচীন টেন্ডুলকারকে। ৪৫২ ওয়ানডে ইনিংসে ৪৯ টি সেঞ্চুরি শচীনের। ২৭৯ ইনিংসেই শচীনকে ছাড়িয়ে গেলেন বিরাট। বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে এই প্রথম সেঞ্চুরি পেলেন কোহলি। এর আগে বিশ্বকাপের নক আউট ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরিই করতে পারেন নি তিনি। গত সপ্তাহে নিজের জন্মদিনে ৪৯তম সেঞ্চুরি করেছিলেন বিরাট কোহলি।
এক বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ড এতোদিন ছিল শচীনের দখলে। ২০০৩ বিশ্বকাপে ৬৭৩ রান করেছিলেন শচীন। ২০ বছর পর আজ শচীনের সেই রানকেও ছাড়িয়ে গেছেন বিরাট কোহলি। তিনি শেষ পর্যন্ত আউট হয়েছেন ১১৭ রানে। এই বিশ্বকাপে ১০ ম্যাচে তার ৭১১ রান।
বিরাট কোহলি ছাড়াও আজ সেঞ্চুরি করেছেন শ্রেয়াস আয়ার। চার ছক্কার ফুলঝুড়ি ছিল তার ইনিংসে। ভারতকে রানের পাহাড়ে তুলতে তার ব্যাট ছুটেছে দুর্বার গতিতে। ৬৭ বলে সেঞ্চুরি করেন তিনি। বিশ্বকাপে টানা দুই ম্যাচে অর্থাৎ ব্যাক টু ব্যাক হান্ড্রেডের দেখা পেলেন শ্রেয়াস আয়ার। এর আগে ভারতের হয়ে ব্যাক টু ব্যাক সেঞ্চুরি করেছিলেন ১৯৯৯ বিশ্বকাপে রাহুল দ্রাবিড় ও ২০১৯ বিশ্বকাপে রোহিত শর্মা।
কোহলি ও আয়ারের আগেই হয়তো সেঞ্চুরির দেখা পেতেন উদ্বোধনী ব্যাটার শুভমন গিল। যদি না ইনজুরিতে পড়ে মাঠ না ছাড়তেন। ৬৫ বলে ৭৯ রান করার পর গ্রোয়েন ইনজুরিতে পড়েন। শেষ দিকে অবশ্য মাঠে নেমেছিলেন। কিন্তু এক বল খেলার সুযোগ পান। আর এক রান করেন। ৬৬ বলে ৮০ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। ভারতের ইনিংসের শেষ দিকে ঝড় তুলেছেন লুকেশ রাহুল। ২০ বলে ৩৯ রানে অপরাজিত থাকেন রাহুল। ভারত পৌছে যায় ৪ উইকেটে ৩৯৭ রানের পাহাড়ে। ভারত অবশ্য ম্যাচে উড়ন্ত সূচনা পায় অধিনায়ক রোহিত শর্মার ব্যাটে চড়ে। ২৯ বলে ৪৭ রান করে আউট হয়েছেন রোহিত। নিউজিল্যান্ডের টিম সাউদি ১০ ওভার বল করে পুরো ১০০ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়েছেন। ট্রেন্ট বোল্ট ৮৬ রানে নেন ১ উইকেট। ওয়ানডেতে এর আগে কখনও এতো রান দেন নি তিনি।
ভারতের ৩৯৭ রানের চাপে শুরুতেই বিপদে পড়ে নিউজিল্যান্ড। ৩৯ রানের মধ্যেই ২ উইকেট হারায়। দুই উদ্বোধনী ব্যাটারই ফিরে গেছেন। তবে ইনফর্ম রাচিন বরিন্দ্রকে হারিয়ে বড় ধাক্কা খায় নিউজিল্যান্ড। বিশ্বকাপে দারুণ ফর্মে রাচিন। মূলত তার উপর ভরসা ছিল নিউজিল্যান্ডের। কিন্তু ১৩ রান করার পর শামির বলে উইকেট কিপার রাহুলের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। সমান ১৩ রানে একই বোলার এবং উকেটকিপারের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন ডেভিড কনওয়েও।
দলের প্রাথমিক বিপর্যয় সামলে সেখান থেকে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় নিউজিল্যান্ড। ডেরিল মিচেলকে সাথে নিয়ে দুর্দান্ত ব্যাট করেছেন অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। সময় যত গড়িয়েছে ভারতের চিন্তা বাড়িয়েছে এই দুই ব্যাটার। শুধু নিউজিল্যান্ডের ইনিংস নয় পুরো ম্যাচে সর্বোচ্চ রানের পার্টনারশিপ গড়েন তারা। তাদের জুটি যখন ডাবল সেঞ্চুরির দিকে যাচ্ছিল তখনই এক ওভারে জোড়া আঘাত হানেন মোহাম্মদ শামি। উইলিয়ামসন ৬৯ রানে আউট হলে এই জুটি ভাঙ্গে ১৮১ রানে। ১৪৯ বল খেলে এই রান সংগ্রহ করেন তারা। শামি তার ঐ ওভারেই আউট করেন টম লাথামকে। টানা দুই উইকেট হারিয়ে চাপে পরে যায় নিউজিল্যান্ড। সেঞ্চুরি করে কিউইদের ক্ষীণ সম্ভাবনা ধরে রাখেন ডেরিল মিচেল। তবে ১১৯ বলে ১৩৪ রান করে মিচেল বিদায় নিলে ভারতের জয় তখনই নিশ্চিত হয়ে যায়। মিচেলকে আউট করে ৫ উইকেট শিকার করেন মোহাম্মদ শামি। আরও ২ উইকেট নিয়ে ম্যাচে ৭ উইকেট নেন তিনি। ৪৮ ওভার ৫ বলে ৩২৭ রানে অলআউট হয় নিউজিল্যান্ড।