ক্রীড়া প্রতিবেদক
আগামী ১১ ডিসেম্বর শুরু হচ্ছে সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ। ফাইনাল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে ২২ ডিসেম্বর। বাংলাদেশসহ এই টুর্নামেন্টে অংশ নিচ্ছে ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা ও ভূটান। এই টুর্নামেন্ট আয়োজন, সার্বিক প্রস্তুতি, বাংলাদেশের সম্ভাবনা এসব নিয়ে খেলা প্রতিদিনের সঙ্গে কথা বলেছেন বাফুফের নারী ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ।
প্রশ্ন: করোনার সময় ফুটবলের কোন আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট হচ্ছে বাংলাদেশে। এসময় আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট আয়োজন করা কতটা চ্যালেঞ্জিং ?
মাহফুজা আক্তার কিরণ: এই টুর্নামেন্ট আয়োজন করা অবশ্যই চ্যালেঞ্জের। আমরা আশা করছি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের তত্ত্বাবধানে এই কাজগুলো আমরা সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে পারব। সরকারের সহযোগিতা আছে। আন্ত:মন্ত্রণালয় বৈঠক হয়েছে। চ্যালেঞ্জ তো অবশ্যই আছে। তারপরও আমার মনে হয় আমরা খুবভালো টুর্নামেন্ট শেষ করতে পারব।
প্রশ্ন: করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন নিয়ে কতটা চিন্তিত আপনারা ? যেহেতু বিদেশী দলগুলো বাংলাদেশে আসবে।
মাহফুজা আক্তার কিরণ: অবশ্যই চিন্তিত। তারপর বাইরের দেশ থেকে টিমগুলো আসবে। কি অবস্থায় আসবে আমরা জানি না। যদিও আমরা তাদেরকে বায়োবাবলের মধ্যেই রাখবো। সবকিছু মিলে চিন্তা তো অবশ্যই আছে। কখন কোন দিক থেকে কিভাবে ওমিক্রন আসবে আমরা কেউ জানি না। তবে সেটার জন্য আমাদের প্রস্তুতি আছে।
প্রশ্ন: সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ নিয়ে আপনাদের প্রস্তুতি এখন কোন পর্যায়ে আছে ?
মাহফুজা আক্তার কিরণ: টুর্নামেন্টের জন্য আমাদেরে সব প্রস্তুতি ঠিক আছে। আমাদের চারটা বিদেশী দলের মধ্যে দুটো দল থাকবে হোটেল এশিয়াতে। বাকি দুটো দল থাকবে হোটেল পূর্বাণীতে। অফিসিয়ালরা থাকবে ফারস হোটেলে। আর আমাদের টিম থাকবে বাফুফের ডরমেটরিতে। কারণ এখানেই ওরা বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।
প্রশ্ন: ঘরের মাঠে হচ্ছে টুর্নামেন্ট। সেখানে বাংলাদেশ দলের সম্ভাবনা কি দেখছেন ?
মাহফুজা আক্তার কিরণ: সবাই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আশা করে। আমরাও তার বাইরে না। আমরাও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য ফাইট করবো। কাউকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। আমি মনে করি সব দলই শক্তিশালী। তাদের সাথে ফাইট করার জন্য আমরা সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমাদের প্রথম ম্যাচ নেপালের সাথে। আপনারা জানেন নেপাল অনেক শক্তিশালী। শক্তিশালী দলের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই আমরা শুরু করছি।
প্রশ্ন: টুর্নামেন্টে ভালো করার জন্য মেয়েদের উদ্বুদ্ধ করতে কি কি পদক্ষেপ নিচ্ছেন ?
মাহফুজা আক্তার কিরণ: আমি সব সময় যে কাজটা করে থাকি মেয়েদেরকে উজ্জীবিত করা। তাদেরকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করা। এটা যে দেশের জন্য অনেক বড় কাজ এটা তাদের বোঝানো। আমার মনে হয় সেটা আমি করতে পেরেছি। আর তা করে যাচ্ছি। মেয়েরা অবশ্যই উজ্জীবিত। আর তারা তাদের শতভাগ দিয়েই খেলবে।
প্রশ্ন: বছর শেষ হতে চলেছে। আসছে নতুন বছরে মেয়েদের ফুটবল নিয়ে আপনাদের কি পরিকল্পনা ?
মাহফুজা আক্তার কিরণ: মেয়েদের ফুটবল নিয়ে আমাদের যে পরিকল্পনা থাকে সেটাই থাকবে। তবে আগামী বছর আমরা চেষ্টা করব ফিফা উইন্ডোতে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার জন্য। যাতে করে মেয়েদের র্যাংকিং আবার ফিরে আসে। আর লিগ যেটা হচ্ছে সেটা তো অবশ্যই হবে। তবে এটার ক্যালেন্ডার আমরা এখনও দিতে পারছি না। কারণ এএফসির ক্যালেন্ডার এখনও হয়নি। এএফসির ক্যালেন্ডার হওয়ার পর আমরা করবো। না হলে দুটোর সাথে সাংঘর্ষিক হবে। হয় বছরের শুরুর দিকে না হয় শেষের দিকে করবো।
প্রশ্ন: আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মেয়েদের বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টে আমাদের সাফল্য আছে অনেক। কিন্তু জাতীয় দলের হয়ে আমরা সেভাবে সাফল্য পাচ্ছি না কেন ?
মাহফুজা আক্তার কিরণ: কারণ আমাদের শক্তিশালী জাতীয় দল নেই। আর শক্তিশালী জাতীয় দল আমি রাতারাতি তৈরী করতে পারবো না। এ মাসের ২৫ তারিখ থেকে দেশব্যাপী জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু হচ্ছে। সেখানে সিনিয়র মেয়েরা খেলবে। আমি কি সেখান থেকে কোন প্লেয়ার পাব। আমি তো বিশ্বাস করি না। কারণ প্লেয়ার যদিও পাই তাদের এখানে নিয়ে এসে অনুশীলন করালে তারা করতে পারবে না। কারণ এখানে অনেক কঠিন অনুশীলন করানো হয়। আমরা আগেও চেষ্টা করেছি। যেমন সাবিনার ব্যাচে যারা ছিল তাদের অনেকে এই ক্যাম্পে এসেছিল অনুশীলনের জন্য। কিন্তু সাবিনা ছাড়া অন্যরা কন্টিনিউ করতে পারেনি। সিনিয়র কাউকে নিয়ে এসে অনুশীলন করালেই সে করতে পারবে না। এভাবে সিনিয়র মেয়েদের ডেকে এনে সিনিয়র টিম করা সম্ভব না। এই সিনিয়র টিম তখনই শক্তিশালী হবে যখন আমাদের এই জুনিয়র মেয়েরা বড় হবে। আরও চার থেকে পাঁচ বছর পরে। তখন আমরা একটা শক্তিশালী সিনিয়র দল পাবো। আজকে যাদেরকে দেখছেন বয়সভিত্তিক পর্যায়ে সাফল্য পাচ্ছে তাদেরকে আমি ২০১২ সালে ট্যালেন্ট হান্ট প্রোগ্রাম করে নিয়ে এসে ক্যাম্পে রেখে বছরের পর বছর পরিচর্যা করে একটা পর্যায়ে নিয়ে এসেছি। এটা কিন্তু শুরুতে ছিল না। এভাবেই তৈরী করতে হবে। তাহলেই একটা শক্তিশালী জাতীয় দল পাওয়া যাবে।